মাহবুব ময়ূখ রিশাদ


ডেলফিনার কবুতর

চ্যাটবক্সে ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সূচনালগ্নে, অর্পা আমার কাছে লেখালেখির খবর জানতে চাইলে চুপ হয়ে যাই।
অর্পাকে বলি, আকাশে-বাতাসে ধূলিকণার মতো গল্প উড়ে বেড়ায়। আমি ধরতে পারছি না। মুঠো গলে বের হয়ে যাচ্ছে।
একটা সহজ কথা জানতে চাইলাম, উত্তর দিলে লেখকের মতো করে।
সত্যি আমি লিখতে পারছি না। থিম দিয়ে সাহায্য করো।
আমি থিম দিব? লেখকটা কে শুনি?
আহা! লেখক! শব্দটা আমাকে আপ্লুত করে। কিন্তু লেখক শব্দটায় অনেক ফাঁকির ব্যাপার আছে। সারাবছর কিছু লিখছি না। অথচ বইমেলা এলে হুড়মুড় করে লিখতে বসে যাচ্ছি। ডেডিকেশনটা কোথায়?
অর্পাকে এসব বিশ্লেষণে না গিয়ে বলি, তোমার দেখার এবং বোঝার ক্ষমতা ভালো। আইডিয়া শেয়ার হলো, হয়ত ভালো কিছু একটা দাঁড়িয়ে যাবে।
তোমার বউ কোথায়? এত রাতে আমার সাথে টাংকি মারছ বসে বসে?
হাসির ইমোকটিকন পাঠাই। এজন্য তো বললাম, তোমার দেখার এবং বোঝার ক্ষমতা ভালো
শেষমেষ অর্পা রাজী হয়। ঠিক হলো, আমরা দুজন মিলেই গল্পটা বানাবো।
অর্পা আমাকে গল্প বলতে শুরু করে।
ডেলফিনা নামের একটি মেয়ের কথা ভাবতে পারি আমরা। মেয়েটি এখন চার দেয়ালের মাঝে বন্দী। অথচ এমন হওয়ার কোন কথাই ছিল না। আমার একেবারে গল্পের শুরুতে ফিরে যাব। একবারে পরিণতি বলে দেয়াটা খুব একটা কাজের কথা নয়। তুমি চাইলে আমরা মেমেন্টো মুভির মতো পেছন দিক থেকে বলতে পারি।
আমি বলি, তুমি শুরু করে দাও তোমার মতো করে। যদিও মেমেন্টোর মতো করতে চাইলে, অনুকরণ হয়ে যাবে। গল্পটা তোমার।

মেয়েটি সুন্দর। সব গল্প-উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্রটি অবিশ্বাস্যরকমের সুন্দর থাকে। তবে এজন্য নয়। ডেলফিনা আসলেই সুন্দর। সে যেমন সুন্দর, ঠিক তেমন ভালো ছবি আঁকতে পারে। অয়েল পেইন্টিং । বিয়ের আগে একটা আর্ট গ্যালারীতে তার সলো আর্ট এক্সিবিশন পর্যন্ত হয়েছিল। আর্ট এক্সিবিশন হয়ত আমাদের গল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু হয়ে উঠবে নাতবে এই তথ্যটি ডেলফিনার মেধা সম্পর্কে ধারনা দিবে এবং মূল গল্পটি শুরু করার আগে ডেলফিনা যে সাধারণ কেউ নয়, আমাদের অবচেতন মনকে এই কথাটি জানিয়ে রাখবে।
ডেলফিনা তার হাজব্যান্ডের সঙ্গে যে বাড়িটিতে থাকে, আমরা সেখানে প্রবেশ করলে দেখতে পাব ডেলফিনার ঘরের জানলায় যে তিনটি কবুতর থাকে, তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কবুতরগুলো ডেলফিনার খুব প্রিয় ছিল। ডেলফিনা, তার হাজব্যান্ড মাহিদকে বলেছিল, সে কবুতরগুলোর সঙ্গে প্রায় কথা বলে। কবুতরগুলো তাকে জানিয়েছে, পৃথিবী দিন দিন বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ছে, ওদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, ডেলফিনা যেন তাদের তাড়িয়ে না দেয়।
আমি অর্পাকে থামাই। তুমি তো চমৎকার গল্প বলতে পার। কবুতরের ব্যাপারটা বেশ ইন্টেরেস্টিং লাগল।
অর্পা বলে, এই কবুতরগুলো হুট করে চলে গেল কেন? যেখানে তারা আশ্রয় খুঁজছিল?
মানুষ হুট করে চলে যায়। কবুতরেরাও যায় তাহলে?
কবুতর যে নেই, ব্যাপারটা প্রথমে খেয়াল করে মাহিদ। তাদের বিয়ে হয়েছে তিন মাস। এখনো নবদম্পতির সুঘ্রাণ লেগে আছে। অথচ, ইদানীং দিনের অনেকটা সময় মাহিদকে ডেলফিনার আচরণ নিয়ে চিন্তিত থাকতে দেখা যায়। উচ্ছল, প্রানবন্ত মেয়েটি ক’দিন ধরে কেমন চুপসে যাচ্ছে। ক্ষ্যাপাটে হয়ে যাচ্ছে। পথে-ঘাটে সিন-ক্রিয়েট করছে।
ডেলফিনাকে বিছানায় আড়মোড়া ভাঙতে দেখে মাহিদ
তোমার কবুতরগুলো দেখছি না।
খেয়ে ফেলেছি। জবাই করে, আস্ত খেয়ে ফেলেছি। অনেক সুস্বাদু ছিল। সরি, তোমার জন্য রাখতে মনে নেই।
ডেলফিনার কন্ঠে এমন কিছু একটা ছিল যা মাহিদ অগ্রাহ্য করতে পারে না।
তুমি ঠিক আছ?
ডেলফিনা ঘাড় ঘুরিয়ে মাহিদের দিকে তাকায়। এখনো সূর্যের আলো ঘরের ভেতরে নিজের পূর্ণ অধিকার ঘোষণা করে নি, এর মাঝে মাহিদের মনে হলো ডেলফিনার চোখ আগুনের মতো জ্বলছে, যেন হাত দিলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে সব।
মাহিদ ভয় পায়।
ডেলফিনা আবার বলে, আমি এখন কিছু করতে পারব না। আমাকে কোন আদেশ করো না। এক্ষুণি দূর হয়ে যাও।
মাহিদ ঠিক বুঝতে পারে না, কথাগুলো ওকে বলা হলো কি’না। ডেলফিনা ভিন্নদিকে তাকিয়ে বাক্যগুলো উচ্চারণ করেছে। মাহিদের ক্ষণিকের জন্য মনে হলো ছায়ার মতো কিছু একটা, দাঁড়িয়ে আছে। ভালো করে তাকালে শূন্য দেয়ালের পরিহাস চোখে পড়ে।

গল্পটা দারুণ এগোচ্ছে।
অর্পা বলে, ডেলফিনাকে তোমার কেমন লাগছে?
হতাশ তো বটেই।
তোমার কী মনে হয়, ডেলফিনার এই হঠাৎ পরিবর্তনের কারণ কী?
সেক্সুয়াল হতাশা হতে পারে।
হতে পারে। কিন্তু তোমার আগে এই ব্যাপারটায় মাথায় এলো কেন?
আমি কিছুক্ষণ ভেবে বলি, কবুতরের সাথে কথা বলে, একাকীত্ব প্রকাশ পায় এতে। বেশি সময় মাহিদকে কাছে পায় না। ভোরবেলা বের হয়ে যাচ্ছে, মানে রাতের বেলা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়।
অর্পা টিপন্নী কেটে বলে, অবশ্য বাংলাদেশের বেশিরভাগ মেয়ের এই সমস্যা হয়। তোমরা মেয়েদের শারীরিক চাহিদার কী জানো?
আমি অর্পার কথা একেবারে ফেলে দিতে পারি না। এমন তো হয় ঘরে ঘরে। সবাই সুখের অভিনয় করছে। আচ্ছা, এমনও হতে পারে ফ্যামিলি ছেড়ে দূরে, ধীরে ধীরে এজন্য ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে।
আমাদের গল্পটা আরেকটু বিস্তার লাভ করলে আমরা জানতে পারব, ডেলফিনা এবং মাহিদ দুজনেই ফ্যামিলি ছেড়ে দূরে থাকে। ইচ্ছে করে নয়। থাকতে তারা বাধ্য।
ভার্সিটি লাইফের উথাল-পাথাল প্রেম, ডেলফিনা খ্রিস্টান, মাহিদ মুসলমান।
মাহিদের বাবা বলেছিলেন, বিয়ে করবে না কেন? অবশ্যই বিয়ে করবে। বিধর্মী মেয়ে বিয়ে করা তো সোয়াবের ব্যাপার। ওকে ধর্মান্তরিত করবে।
না,মানে আব্বা আমরা যে যার ধর্ম পালন করব।
মাহিদের বাবা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। তোমার ইচ্ছে হলে করবে। আমার বাসায় থাকতে পারবে না। কথাটা তিনি খুব একটা ভেবেও বলেন নি। কিন্তু মাহিদের মনে কথাটি গেঁথে যায়। এরপর আর কথা এগোয়নি। ডেলফিনার বাসাতেও মানতে পারে নি। তবে চাইলে ডেলফিনার মানাতে কোন সমস্যা হতো না। বাসায় যখন মানা করল, ডেলফিনা অবাক হয়ে গিয়েছিল। বাসার মানুষজন কবে থেকে তাকে নিয়ে এত ভাবতে শুরু করল, ভেবে কোন কূল-কিনারা পাচ্ছিল না।
মাহিদ যখন তার বাবার সিদ্ধান্তের কথা ডেলফিনাকে জানাল, সে প্রস্তাব দিল চলো পালিয়ে যাই। ডেলফিনার এই প্রস্তাবে মাহিদের না করার কোন কারণ থাকে না। ওরা একদিনের সিদ্ধান্তে বিয়ে করে ফেলে
বিয়ে করার জন্য বন্ধুর কাছ থেকে হাজার দশেক টাকা ধার নেয়। এমনিতে বন্ধুরা ধার দেবার জন্য খুব একটা উৎসাহী না হলেও, পালিয়ে বিয়ের ব্যাপার হলে তারা আগ্রহী হয়েই সাহায্য করে।
বিয়েতে সর্বসাকুল্যে খরচ হয় পাঁচ হাজার টাকা। বাকি টাকা সঙ্গে এর ওর কাছ থেকে আরো কিছু টাকা নিয়ে  হুট করে হানিমুনে চলে যায়
তুই কই? তোর জন্য অপেক্ষা করতেসি, আজকে আমাদের ক্লায়েন্টের অফিসে যাওয়ার কথা। মাহিদের ফোনে কলিগের ফোন আসে। একটু ম্যানেজ করে নে, আমি হানিমুনে, কক্সবাজার।
এরপর হোটেল কক্স টুডের রুমের ভেতর তাকালে আমরা জানতে পারব, ওদের বিবাহজীবন বেশ ভালোভাবে শুরু হয়েছিল। যদিও কোন হানিমুন কাপলের রুমের ভেতর উঁকি দেয়া একাধারে নীতি বির্বজিত, বিব্রতকর। তারপরেও আমরা গল্প এগিয়ে নেবার জন্য এই নীতিহীন কাজটি করেছিলাম।
অর্পা কিছুটা ইতস্তত বোধ করছিল। আমি অর্পাকে আশ্বাস দেই, এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ, ওয়ার এন্ড রাইটিং।
পাতলা, কালো নাইটিতে আমি যখন ডেলফিনাকে আবিষ্কার করি, তখন কিছুটা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিয়েছিলাম এবং আমার মুখ থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এসেছিল। ভাগ্যিস চ্যাটবক্সের দুই প্রান্তে বসে একজন আরেকজনের এক্সপ্রেশন দেখতে পারে না। নাহয় অর্পা নিশ্চিত বাঁকা হাসিতে কিছু একটা বলত।
ডেলফিনা এগিয়ে এসে হাসতে হাসতে মাহিদের গালে বেশ জোরে একটা চড় মারে। এরপর আমি এবং অর্পা দুজনেই হানিমুন কাপলের রুম থেকে বের হয়ে আসি।
তোমার যৌনতা নিয়ে হতাশার ব্যাপারটা ঠিক যাচ্ছে না বোধহয়।
হু, তখন শারীরিকে চাহিদার কিছু জানি না বলে কথা শুনিয়ে দিলে, এটা জানো না, ফ্রাস্ট্রেশনের বিষয়টা বুঝতে হলে আমাদের পর্যায়ক্রমে পরবর্তী দৃশ্যগুলো দেখতে হবে?
ও আচ্ছা, পরবর্তী দৃশ্যগুলো দেখার খুব শখ হয়েছে না?
আমি হাসি। দেখতে চাইলে যদি দেখতে তাহলে তো বলতাম, চলো দেখি। যাদের সমস্ত জীবনটাই আমরা দেখছি, তাদের এই বিষয়টুকু বাকি থাকবে কেন?
তোমার কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু আমাদের গল্পের ক্ষেত্রে বাকি দৃশ্যটুকু দেখার প্রয়োজন নেই। আমরা এতটুকু বুঝতে পেরেছি, ডেলফিনা-মাহিদের দাম্পত্য জীবনের শুরুটা বেশ ভালো ছিল।
এরপর তারা আবার গল্পে ফিরে।
তোমার অনেক পরিচিত মানুষ আছে, আমাকে একটা এক্সিবিশনের ব্যবস্থা করে দাও। মাহিদের কাছে আবদার করে ডেলফিনা। রেডি হতে হতে মাহিদ জবাব দেয়, এর আগে একবার করেছিলে না, ওখানে যোগাযোগ করো।
ওদের গ্যালারিটা ভালো না, তাছাড়া বাসা থেকেও অনেক দূরে। আমি চাচ্ছি না।
এক্সিবিশন পুরোনো ছবি দিয়েই করবে? নতুন কিছু এঁকেছ?
ডেলফিনা দৌঁড়ে গিয়ে একটি বিমূর্ত ছবি বের করে আনে। উজ্জ্বল আলোতে মাহিদের চোখ জ্বালা করে ওঠে।
এটা কী?
মাহিদের প্রশ্নে, ডেলফিনার মুখের আলো দপ করে নিভে যায়।
চিনতে পারলে না, এটা কী? আমার ভার্জিনিটির রক্ত। পছন্দ হয়েছে?
ডেলফিনার হঠাৎ রেগে যাওয়াকে খুব একটা পাত্তা দেয় না মাহিদ। কি যে পাগলের মতো কথা বলো না, তুমি। আমি যাই অফিসে।
খুব সম্ভবত, বিয়ের পর এটাই প্রথম ঝগড়া ওদের মাঝে। ডেলফিনা অনেকক্ষণ মন খারাপ করে জানালার পাশে বসে থাকে।
তখন সে প্রথমবারের মতো দেখতে পায়, তার অচেনা বন্ধুকে।
একদিন, মাহিদ তোমাকে বলেছিল, তোমার ছবিগুলো তোমার মতো সুন্দর। মনে আছে?
ডেলফিনা চমকে উঠে। কে কথা বলছে?
কে কথা বলছে, এটা জানার থেকেও আমার কথার সত্যতা যাচাই করা জরুরী।
ডেলফিনা দৌঁড় দিয়ে বাসা থেকে বের হতে চায়। দরজা বন্ধ। খুলতে পারে। অল্প সময়ের ভেতর ঘেমে অস্থির হয়ে যায়। তখন আওয়াজ, অবয়ব নিয়ে ডেলফিনার সামনে হাজির হয়। অবিকল ওর মতো দেখতে আরেকজন মানুষ।
তুমি চুপচাপ বসে, ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ। বিয়ের আগে মাহিদ তোমাকে ছবি নিয়ে কী বলেছিল, আজ কী বলেছে?
ডেলফিনা সম্মোহিতের মতো খাটে গিয়ে বসে। ওর প্রতিবিম্বর দাবিটা যে সত্য সেটা বুঝে নেয়।
তোমার ওকে শিক্ষা দিতে হবে। খুব বেশি দেরি হবার আগেই ওকে ঠিক করতে হবে।
ডেলফিনা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জানতে চায়, আর যদি ঠিক না হয়?
তাহলে, ওকে মেরে ফেলতে হবে।
ঘরের ভেতর পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। ডেলফিনার মাথা ঘুরে বিছানায় পড়ে যায়।

আরেকটি দৃশ্যে আমরা ডেলফিনাকে অন্য একটি ছেলের সাথে হাসতে হাসতে কথা বলতে দেখি।
আই এম সেক্সি, আই নো। আরেকটু ভালো করে দেখে নাও।
মাহিদ সেখানে এসে উপস্থিত হয়।
মাহিদ, দেখ তোমার বন্ধু আমাকে কী বলছে! কথাটি বলে ডেলফিনা আবার হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে।
মাহিদ ডেলফিনার হাসির সঙ্গে তাল মেলায়।
বন্ধুটি চলে গেলে ডেলফিনা, মাহিদের কানে কানে বলে, চলো আমাদের রিলেশনটাকে স্পাইসি বানাই। পরকীয়া করবে? তুমি ও আমি দুজনেই ?
মাহিদ হাসে। তোমার কী হয়েছে? এমন অদ্ভুত কথা বলছ কেন?
নটি বয়, তুমি কিন্তু ভেতরে ভেতরে খুশী হচ্ছ। আমাদের ভেতরে একটা এভিল মানুষ বাস করে। তাকে মাঝে মাঝে খাওয়া দিতে হয় বুঝতে পেরেছ? না হয় সে তোমাকে খাবলে-খুবলে শেষ করে ফেলবে।
তুমি কী আমাকে নিঃশেষ করে দিতে চাও?
মাহিদ এবার বিরক্ত হয়। বাড়ি চলো।
ডেলফিনার কন্ঠ আবার পরিবর্তন হয়ে যায়। তুমি আমাকে নিঃশেষ করতে চাইলে, আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়ব না। একেবারে শেষ করে ফেলব।
মাহিদ ঘাবড়ে যায় অনেক। এই ঘটনার পরবর্তী ঘটনা যা ঘটবে তা অবশ্য আমরা আগেই দেখে ফেলেছি। মাঝের কিছু ঘটনা আমাদের জানা হয় নি।
আমরা সাইকিয়াট্রিস্টের চেম্বারে ডেলফিনাকে দেখতে পাব। সে হাসিমুখে জানাব, আমার তো কোন সমস্যা নেই। যদি সম্ভব হয় আমার হাজব্যান্ডকে কাউন্সেলিং করেন। ইদানীং সে পরকীয়া করতে চাচ্ছে।
সুতরাং, ডেলফিনার সমস্যার খুব একটা সমাধান হয় না।
রিকশায় উঠে, মাহিদ বলে, তুমি ডাক্তারকে মিথ্যে বললে কেন? তোমার সমস্যা হচ্ছে। আমাদের এই ব্যাপারটার সমাধান করতে হবে। দুরত্ব বেড়ে যাচ্ছে। আমরা কেউ কাউকে বুঝতে পারছি না।
ডেলফিনা গম্ভীর স্বরে বলে, আমি তোমাকে বুঝতে পারি, তুমি হয়ত পার না। সেজন্য গতকাল তোমাকে প্রস্তাবটি দিয়েছি।
তুমি সত্যিই চাও, আমাদের মাঝে আরো একজন আসুক?
ডেলফিনা লাফ দিয়ে উঠে মাহিদের কানে জোরে একটা কামড় দিয়ে বলে, হ্যাঁ চাই। আমি দেখতে চাই, তুমি আমাকে ছাড়া আরেকজনকে কিভাবে সম্মোহিত করো। এটা ভেব না, তুমি করবে আমি বসে থাকব, আমিও করব, আমাকে যখন আরেকটা মানুষ চুমু দিবে আমি আড়চোখে তোমার এক্সপ্রেশন দেখতে চাই, তোমার চোখে আগুন দেখতে চাই, তুমি তো নিরুত্তাপ, তোমার নিঃশ্বাস মরে গেছে, তোমার চোখে এক দেয়াল পুরুত্ব- আমি সেগুলো ভাঙতে চাই, ভেঙ্গে চুরমার করতে চাই। জানতে চাই, তোমার উত্তাপ গচ্ছিত কোথায়?
মাহিদ হাল ছেড়ে দেয়কিছু বলে না। হেঁয়ালি ধরতে পারে না। বিয়ের আগেও মেয়েটা একটু পাগল ধরণের ছিল। ছটফটে, উদাস। কিন্তু এতটা বুঝতে পারে নি মাহিদ। ডেলফিনার প্রাণচাঞ্চল্যের কাছে প্রতিদিন হেরে যেতে ভালো লাগে না মাহিদের।

আমি  বিজয়ের বেশে অর্পাকে বলি, দেখেছ সেক্সুয়াল ফাস্ট্রেশন।
টিপিক্যাল পুরুষ মানুষ। উত্তাপ বলতেই নজর সেদিকে চলে গেল। আচ্ছা, শোনো হ্যাপি হতে গেলে দু জন মানুষকে একই ধাঁচের হতে হয়। এমন হতে পারে না, ডেলফিনার চাওয়াটা একটু বেশি? আর ডেলফিনা যে ছায়াটার সাথে কথা বলছে, ঐ ব্যাপারটাই বা তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে?
ওরে, তোমার পক্ষপাত দেখি মাহিদের দিকে অনেকটা সরে যাচ্ছে।  ছায়ার সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি হয়ত আমাদের গল্পের সামনে পরিষ্কার হবে। এখনো ঠিক স্পষ্ট নয়।
মাহিদের দিকে পক্ষপাত সরে যাওয়া এখানে মূখ্য না। আসলে, প্রত্যেকের জায়গা থেকে আমাদের কিন্তু দেখতে হবে। ওরা দুজন দুজনকে বিয়ের আগে যেমন ভেবেছিল, কেউ তেমন নয়। এটা তো বাস্তবতা। ছকে বেঁধে জীবন চলে না। মানিয়ে নিতে হয়। তোমার কী মনে হয় ডেলফিনার প্রস্তাব শুনে মাহিদ খুশী হয়েছে? তুমি খুশী হতে মাহিদের জায়গায় থাকতে?
মাহিদ আসলে এখন ঠিক খুশী হবার মতো অবস্থায় নেই। ও ডেলফিনাকে নিয়ে চিন্তিত।
আমি এড়িয়ে গেলেও অর্পা টোকা দেয়, আর তুমি? তোমার এভিল মনকে খাদ্য দিবে না?
সুযোগ পেলে হয়ত দিব, তবে সত্যি বলতে এসব নিয়ে ভাবি নি কখনো।
আহা! সাধু!
খালি আমি একাই সাধু? তুমি না?
অর্পা হাসির অনেকগুলো ইমোকটিকন পাঠায়। আমি কী সেটি তুমি হাজার চাইলেও জানতে পারবে না।
আমরা নিজেদের মতো আলোচনা বেশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাই না। আমাদের গল্পে দারুণ এক মোড় চলে আসে।


ডেলফিনাকে আমরা আবার অদৃশ্য ছায়ার সাথে কথা বলতে দেখি। বাতাসের অবয়বে মানুষ হয়ত, কিন্তু আমাদের চোখে পড়ে না।
তুমি কিন্তু বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছ, আমাকে যা বলছ আমার পক্ষে করা সম্ভব না।
আমরা এদিক-সেদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজে পাই না। আমাদের উৎসুক চোখ রান্নাঘরের বারান্দায় যায়, খাটের নিচে যায়, দরজার পেছনে যায়। কোথাও কেউ নেই।
হা হা, তা ভালো বলছে। কালকেরটা মনে হয় বেশি জোরে দিয়ে ফেলেছিলাম।
কী বললে? দড়ি। তারপর কী ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিব?
সিনেমাতে তো দেখেছি। ঐভাবে?
আমরা ডেলফিনার চোখে অচেনা উচ্ছ্বাস দেখি। মাহিদকে ফোন দেয় সে। মাহিদ, ডেলফিনার ফোন দেখে ধরতে দেরি করে। সাথে কলিগ আছে। কিন্তু শেষমেষ ফোন ধরে। ফোন না ধরলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে।
মাহিদ,একটা শক্ত নাইলনের দড়ি নিয়ে আসবে।
মাহিদ অবাক হয়। কী করবে?
ডেলফিনা শান্ত স্বরে বলে, গলায় ফাঁস দিব।
মাহিদ সহ্য করতে না পেরে চেঁচিয়ে ওঠে। তোমার ফাজলেমির একটা সীমা থাকার দরকার। প্রতিদিন নতুন রুপ দেখাচ্ছ, বলে খেয়াল হয় পাশে কলিগ আছে। ফোন রেখে দেয়।
মাহিদ অফিস থেকে বাসায় ফিরছিল কলিগের সাথে। না চাইতেও কলিগের সামনে অনুভূতি প্রকাশ পেয়ে যায়। কলিগের নাম রিতা। একেবারে ডেলফিনার উল্টো চরিত্রের একটি মেয়ে।  
কী হয়েছে?
আর বলো না, তোমাকে বলেছিলাম না, আমার বউ পাগল হয়ে গেছে। কি বলছে, না বলছে তার কোন ঠিক নেইআজ বলল, দড়ি কিনে নিয়ে যেতে। জানতে চাইলাম কেন? বলল, সুইসাইড করবে। সারাক্ষণ টেনশনে থাকি। কখন কী হয়ে যায়, বাড়িতেও জানাতে পারছি না, সবদিক দিয়ে একেবারে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। রিতা , মাহিদের হাতে হাত রাখে। সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করবেন না।
রিতার হাতে হাত রেখে মাহিদ কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করে। কী মনে করে বলে ফেলে, আমার একদম বাসায় যেতে ইচ্ছে করে না। ভয় লাগে। দমবন্ধ লাগে। এমনিতেই ব্যস্ততার শেষ নেই।
আজকে আমার বাসায় চলেন। খেয়েদেয়ে একটু রিলাক্স হয়ে বাসায় ফিরলেন। রিতা রিলাক্স শব্দটার উপর জোর দেয়। মাহিদ, না করার কারণ দেখতে পায় না।


আমরা অবশ্য বুঝতে পারছিলাম না, ডেলফিনা কার সঙ্গে কথা বলছে, দড়ি দিয়েই বা সে কী করবে। অর্পা ও অন্ধকারে থাকার কথা জানায়, যদিও আমি খানিকটা আন্দাজ করতে পারছি।
কী?
হয় না সিনেমায়, ওই রকম আর কী?
তুমিও দেখি ডেলফিনার মত কথা বলতে শুরু করলে। সিনেমায় অনেককিছুই হয়।
মানে, বলতে চাচ্ছিলাম মাহিদের হাত-পা বেঁধে রেখে...
বুঝতে পেরেছি, এই ডেলফিনা মেয়েটার চরিত্র দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে।
আচমকা আমাদের গল্পটা ছোট্ট এক মেয়ের কাছে চলে যায়। ফ্রক পড়ে দৌঁড়াচ্ছে। বয়স কত হবে? দশ কিংবা এগারো।

এই, ডেলফিনা কোথায় যাচ্ছ, একা একা? ডেলফিনার মা’র গলা শোনা যায়।
মা,  আমি পার্ক থেকে ঘুরে আসি। ডেলফিনা পার্কে একা একা ঘুরে বেড়ায়। তার সমবয়সী কাউকে দেখা যায় না। ওরা যেখানে থাকে সেখানে কারো ছোট বাচ্চা নেইডেলফিনার স্কুল বেশ দূরে। স্কুলের বন্ধুরাও কেউ কাছেপিঠে থাকে না। তাই ঘুরতে যেতে হলে ডেলফিনা একাই যায়। অন্য মা’দের মতো তার মা তাকে আটকায় না। ডেলফিনার বড় বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে অল্প বয়সে। এখন কোথায় থাকে ঠিক জানে না সে। মাঝে মাঝে তার বড় বোনের কথা মনে পড়লে, তার কান্না পায়। বড় ভাই, অনেক বড়। ডেলফিনা নামে তার একটি ছোট বোন আছে শুনলে সে হয়ত ক্ষণিকের জন্য চমকে যেতে পারে।
আমাদের সামনে ডেলফিনার লোনলি শৈশব দেখছি, উৎকন্ঠা নিয়ে বসে আছি।
অর্পা বলে, ডেলফিনার জন্য এখন অনেক খারাপ লাগছে। বেচারি, ছোটবেলায় যেখানে খেলার মানুষের অভাব থাকে না, সেখানে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কত বিপদ হতে পারে, ওর।
তখনকার সোসাইটি বোধহয় এখনকার মতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগত না।
আমরা আবার ডেলফিনাকে দেখতে পাই। ছুটে ছুটে আসছে বাড়ির দিকে।
দৌড়াও ডেলফিনা, দৌঁড়াও, কেও যেন তোমাকে ছুঁতে না পারে। তোমার পিছনে ঘুরবে সমস্ত পৃথিবী।
আমরা দেখতে পাই, ডেলফিনার চোখে জল। কেন ঠিক বুঝতে পারি না। একা একা থাকতে ভালো লাগে না দেখে হয়ত নীরবে চোখের জল ফেলে। ডেলফিনা বড় হয়ে কাঁদে নি। আমরা কী খুব একটা কাঁদতে দেখেছি, তাকে?
ডেলফিনা ঘরের দরজা খুলতে গিয়ে থমকে যায়। দরজা বন্ধ। জানালা দিয়ে টুপ করে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
মা’র ঘর থেকে চিৎকার শুনে আঁতকে ওঠে।
সিনেমায় দেখেছে, গুন্ডারা যখন কাউকে তুলে নিয়ে যেতে চায়, তখন এমন চিৎকার করে। ওর মাকে কেউ তুলে নিয়ে যেতে এসেছে দেখে ভয় পেয়ে যায়মা’র ঘরের কাছে এসে স্তব্ধ হয়ে যায়।
বাবার হাতে চাবুক। ওর মা’কে মারছে। ডেলফিনা সহ্য করতে পারে না। অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
আমি কিছুক্ষণ পর কথা বলি, অর্পা সময় চায়
মন খারাপ করছ কেন, শুধু শুধু? এগুলো তো আমাদের বানানো গল্প।
বানানো গল্প না। কোন গল্প বানানো হয় না।
তুমি শুধু শুধু মন খারাপ করছ।
অর্পা আমাকে বলে, তুমি হ্যাপি?
আমার কথা আসছে কেন এখানে?
আমার ধারনা তুমি হ্যাপী না। এই গল্পটায় এক ধরনের মুক্তি খুঁজছ। ডেলফিনার মতো কাউকে খুঁজছ, যার হতাশা দেখে নিজের হতাশাগুলো খারিজ করে দিতে পার।
অর্পা, আমরা কেবল গল্প আলোচনা করছি। ডেলফিনার কষ্টকর অতীত খুঁড়ে দেখলেই মুক্তি পেয়ে যাব, ব্যাপারটা এত সহজ নয়।  
উহু, অতীত না। অন্যকিছু । টু স্পাইস ইওর লাইফ। হয়ত এজন্য ডেলফিনার জীবনটাকে নরক বানাচ্ছ।
আমি এখানে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। আর গল্পটা তো আমি একা বানাচ্ছি না, আমরা দুজন মিলেই বানাচ্ছি। তাহলে কী, আমি বলব তুমিও মুক্তি খুঁজছ?
অর্পা এবার নিজ থেকেই থেমে যায়।


ডেলফিনা কবুতরগুলো ঘরে নিয়ে আসে। তারপর ক্রমান্বয়ে ছোট ধারালো ছুরি দিয়ে তাদের জবাই করে, বাক্সে  রেখে দেয়, ডেলফিনা যাকে বলে জাদুর বাক্স।
তুমি,আমাকে দিয়ে এসব করাচ্ছ। তোমাকেও আমি ছাড়ব না। আবার পরক্ষণেই বলে, না তোমাকে মাফ করে দিব। তুমি সাহস দিলে দেখেই আমি বেঁচে আছি। তুমি আমার একমাত্র বন্ধু। একটু পর আবার কথা উল্টে যায়। আমার এমন সাহসের দরকার নেই। তোমার কারণে আমি নিজেকে শেষ করতে পারছি না।
ডেলফিনা উদভ্রান্তের মতো বকতে থাকে। ডেলফিনা উন্মাদের মতো পায়চারি করতে থাকে।  তোমাকেও আমি জাদুর বাক্সে ভরে ফেলব।
একটা কবুতর কম হয়েছে। রিতাকেও ভরতে হবে ওখানেসাধু সাজে? ভালোবাসার কিছু জানে? পেয়েছেও ওরকম একজনকে, মাহিদ! ডেলফিনা ঘরদোর কাঁপিয়ে হোঁ হোঁ করে হেসে ওঠে। মাহিদ! তার ভালোবাসার মানুষ মাহিদ, যে একদিন আকাশছোঁয়া ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। অথচ আজ কী, ক্লান্তিকর, একঘেয়ে জীবন।

তোমার কবুতরগুলো দেখছি না। আমাদের গল্প চলে যায় ঠিক শুরুতে।
এবার ডেলফিনার জবাব বদলে যায়। ডেলফিনা আড়মোড়া ভেঙ্গে শুয়ে থাকার বদলে, উঠে বসে। ডেলফিনাকে বলতে শুনি কবুতরগুলো আসলে কে জানো?
ডেলফিনা তার জাদুর বাক্স বের করে। বাক্স খুলতেই তিনটি কবুতর জীবিত হয়ে জানালার পাশে চলে গেল।
ঐ যে মাথাটা একটু বড়, সারাক্ষণ কেমন ভয়ে ভয়ে আছে, ওটা তুমি। তার সামনে যে নড়াচড়ার করার চেষ্টা করছে, ওটা আমার বাবা, আর সবার পেছনে আমার একটা ছায়াবন্ধুকিন্তু ওরা তো আসল না। তুমি আসল। তুমি রক্ত মাংসের মাহিদ। ওদেরকে আমি কাছে পাচ্ছি না, তোমাকে পাচ্ছি।
ডেলফিনা শান্তভাবে কথা বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
আমাকে বিয়ে করছিলি কেন? শরীরের জন্য? ঐটা বলতি, এমনেই দিতাম। আমার যে এরকম একা একা থাকতে ভালো লাগে না, আমি যে ঐ ছোট থেকে একা একা বড় হইসি, এখনো একাই আছি- কোনদিন বুঝতে পারসিলি? আচ্ছা, আমাকে বলো তো আমার সঙ্গে এক মিনিট করার মুরোদ নেই, রিতার সাথে কিভাবে পারলে? ফিসফিস করে ডেলফিনা বলতে থাকে, আমার বাবা ও তোমার মতো ছিল। তোমার মতো কাপুরুষ। আর কাপুরুষদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। আমার বন্ধু আমাকে বলেছিল, সময় থাকতে তোমাকে ঠিক করতে হবে। না হয় বাবার মতো তুমিও এমন করবে। ক্ষণে ক্ষণে ডেলফিনার গলার টোনের পরিবর্তন ঘটে। ডেলফিনা এবার তার বন্ধুর দিকে তাকায়। যদিও আমি তোমাকেও মেরে ফেলব, কিন্তু তুমি বুদ্ধি দিয়ে আমাকে অনেক সাহায্য করেছ। এজন্য তোমার আয়ু দু দিন বাড়িয়ে দিলাম।
ডেলফিনা বালিশের নিচ থেকে ছুরি বের করে। ছুরিতে মানুষের রক্ত লেগে আছে। এই রক্ত কোথা থেকে এসেছে সেটি জিজ্ঞেস করার মতো অবস্থায় নেই মাহিদ।
সে ভয় পেয়ে ঘর থেকে বের হতে চায়। পারে না, আটকে যায়। মাহিদ চিৎকার দিতে যায়, গলা নিঃশব্দ হয়ে যায়। মাহিদ হাত নাড়াতে চায়, হাত অবশ হয়ে যায়।
আমি কবুতরগুলোকে মেরে ঐ বাক্সে ঢুকিয়ে রেখেছিলাম। আবার জীবিত করেছি তাদের। আমি তোমাকেও কেটে টুকরো টুকরো করে বাক্সে ভরে রাখব, তারপর যখন ইচ্ছে জীবিত করব, খুব মজা হবে, না?
ডেলফিনার ছুরি ক্রমশ এফোঁড়ওফোঁড় করে দিতে থাকে মাহিদকে।

আমাদের গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু শেষ হয় না। ডেলফিনাকে আমরা হাসপাতালের বেডে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আমার ইচ্ছে করে ডেলফিনাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে। আমি জানি, অর্পার ও হয়ত ভীষণ খারাপ লাগছে।
অর্পা আজকের মতো আমার কাছ থেকে বিদায় নেয়।
আমি ল্যাপটপ বন্ধ করে বিছানায় আসি। 
হঠাৎ শুনতে পাই, তোমাকে কেন জানি আমার খুব কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে। এই শেষরাতে আমার বউ, নাকি ডেলফিনা কথা বলে উঠে আমি ঠিক বুঝতে পারি না।


2 comments: