সায়ন ঘোষ

প্রদীপ চৌধুরী ও জর্জ ডডেনের পত্রালাপ


24.5.71


ইংল্যাণ্ড থেকে প্রদীপ চৌধুরী'কে লেখা জর্জ ডডেনের একটি চিঠি ------------------------------------------------------------------------------------------- প্রিয় প্রদীপ, আমি তোমার চিঠি পেয়েছি, এবং উপলব্ধি করেছি খুবই বাস্তবিক, আশু তোমার নির্বাসন বোধের দৈহিক ভিত্তি এবং এখন হতাশা। এখানে তোমার দোরগোড়ার সম্মুখে অধিক মানসিক অথবা সাধারণ অবস্থা এখন বাংলাদেশে। এটা ভয়ানক বস্তু - - সেই প্রতিবেদনগুলি আমি পেয়েছি এবং পড়েছি আর ভয়ঙ্কর, ভয়ঙ্কর এবং এখনও 'কেবল' আমাদের অবিশ্বাস্য ধাতুমুদ্রার খুনে ইতিহাসে আরও একটি এইরূপ ঘটনা। কিন্তু এক্ষেত্রে তুমি প্রায় ঠিক, সুতরাং এটা সাহায্য করতে পারবে না কিন্তু তোমার অস্তিত্ব'কে ধারণ করবে এখন। এমনকি হয়তো এটাকে আরও উত্তেজকমূলক করে তুলবে ??? এটা প্রায়শই বলা হয় যে শুধুমাত্র বিপর্যয়ে পুরুষেরা প্রকৃতই জীবনের কাছে আসে - - তাদের একটা উদ্দেশ্য প্রদান করে, পরিস্কার মাথা, পরিস্কার কাজ। আমি জানি না যদি এটাই ঘটনা হয়, কিন্তু যা কিছু, আতঙ্কজনিত আমি জানি এখানে উপস্থিত। কি করা যেতে পারে ? কি হতে চলেছে ? কতক্ষণ পর্যন্ত এটা স্হায়ী হবে ? বাংলাদেশ কি মুক্ত হবে ? ভারত কি পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে নিয়োজিত হবে ? চীন আসবে কি ? রাশিয়া ? আমেরিকা ? ওহ ... ... এই চিন্তাগুলো আমার মাথার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ? সেই হত্যাকান্ডের ছবিগুলি আমি দেখেছি, এবং সেই গৃহহীনেরা, সাংঘাতিক। মানুষ হল প্রকৃতই একটি বোবা চোদোন জন্তু ! এবং পরাক্রমশালীও হতে পারে ! তুমি কি সেই সিনেমাটি দেখেছো, দ্যি ব্যাটেল অফ আলজিয়ার্স ? ফরাসীদের বিরুদ্ধে এফএলএন* আলজেরিয়ান অভ্যুথ্থান, ১৯৬২তে আলজেরিয়ার জন্যে স্বাধীনতায় ফলদায়ক। এটা হয়তো সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র - - ভয়ের অভ্যন্তরে এমন মর্যাদা আর সৌন্দর্য্য, এমনকি আনন্দ। কি এক অভিজ্ঞতা ! যাই হোক, ফিরে আসি তোমার কাছে - - তুমি অবশ্যই আমাকে অবগত করতে থাকবে যে কি কি ঘটছে আগড়তলায়/ত্রিপুরায়/তোমার সাথে ! আর এখানে আমি সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে ভারতে আসার জন্য প্রস্তুত - - এটা আমাকে কোথায় ছেড়ে যাচ্ছে ? এই সময়ে দাঁড়িয়ে বুদ্ধিজীবি অথবা আবেগপ্রবণ নিহিলিজম সম্বন্ধে বলার ক্ষেত্রে এখানো কোনো বোধ অবশিষ্ট নেই, যদিও তুমি রয়েছো একটি গৃহযুদ্ধের আবর্তের ভিতর। এখন এটা অত্যন্ত প্রত্যক্ষভাবে, হচ্ছে এখানে ! এখন স্বভাবতই তোমাকে আসল কাজ করতে হবে - - এবং এটাই যা আমি চাই তুমি আমাকে বলবে যখন তুমি লিখবে। তুমি কি করছো - - আর যদি তোমাকে পালাতে হয়, কোথায় তুমি, এবং কোন ঠিকানায় আমি তোমাকে লিখতে পারবো। ভালোবাসার সহিত,জর্জ


* 'এফএলএন' বা 'ফ্রেঞ্চ লিবারেশন নেভি' অভ্যুথ্থান উপস্হাপিত হয়েছিল একটি প্রশ্নের সাথে যে প্রধান প্রণালী হিসেবে সশস্ত্র বিদ্রোহ গ্রহণ করা হবে কিনা। যুদ্ধের প্রথম বর্ষের প্রারম্ভে আব্বাসের ইউডিএমএ, ব্রাহ্মণ্যবাদী'রা এবং পিসিএ এফএলএন-এর অভিমুখে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিল। কমিউনিষ্ট'রা, যারা শুরুতে অভ্যুথ্থানের সহযোগিতায় কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি, পরবর্তীতে এফএলএন'কে পরিব্যাপ্ত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এফএলএন নেতারা প্রকাশ্যে দলের সমর্থন অস্বীকার করে।





No comments:

Post a Comment